শিরোনামহীন গল্প

 

শিরোনামহীন গল্প

 

শিক্ষক হলেন একজন সম্মানিত এবং শ্রদ্ধেয় ভাজন ব্যাক্তি। কিন্তু কখনো কখনো কারোর কাছে ভয়ের কারন হয়ে দারায়। তেমনি একটা ঘটনা আজ আমি বর্ননা করতে চলেছি। JSC তে ভালো রেজাল্ট নাকরার জন্য স্কুল থেকে আমাকে বিজ্ঞান বিভাগে পড়ার সুযোগ দিতে চাচ্ছিলোনা। পড়ে একজন পারিবারিক শিক্ষক(আমার দূর সম্পর্কের একজন দুলাভাই) এর সুপারিসে সেই সুজগ  পেয়েছিলাম। কিন্তু SSC তে ভালো ফলাফল আনতে পারলাম না। বলতে গেলে কোনোমতে পাস করেছি মাত্র। যা ছিলো যেকোনো কলেজে বিজ্ঞান বিভাগে পড়ার নূন্যতম যগ্যতা থেকেও কম। কিন্তু আমার পরিবার থেকে চাচ্ছিলো আমি যেনো পড়ালিখা চালিয়ে যাই।সায়েন্স না পাইলেও যেনো আর্স কিম্বা কমার্সে হইলেও পড়ালেখা বাদ না দেই। এমন সময় আমি জেদ ধরে বসি সায়েন্স না পাইলে পড়ালিখা ছেড়ে দেবো।
শেষ পর্যন্ত ফুপাতো ভাই এর শুপারিসে আমার ইচ্ছাই পুরন করা হইলো, কিন্তু শেষ বারের মতো।আপনাদের নিশ্চয় এতোক্ষনে আমার সম্পর্কে একটা ধারনা হয়েই গেছে।যাইহোক এইবার মূল ঘটনায় আসা যাক।
কলেজে এসে ফেল করতে করতে ২য় বর্ষে উঠেগেলাম। ততোটাও খারাপ ছাত্র ছিলাম না, year change পরীক্ষায় কনোমতে পাস করেই ২য় বর্ষে উঠেছিলাম। কলেজে আমি এমন ছাত্র ছিলাম যে প্রতিদিন ক্লাস করার পরেও কনো স্যার আমাকে ভালো ভাবে চিনতো না।২য় বর্ষের উঠার পর একদিন ক্লাসের একটা ঘটনা। রসয়ন স্যার প্রতিদিনের মতো ক্লাসে এলেন ঠিকি তবে স্যারকে সাভাবিক মনে হচ্ছিলো না। দুঃখিত স্যারের নাম রসায়ন না, স্যার আমাদের রসায়ন ক্লাস নিতেন। আমার ঐ দিনের কথা ঠিক মনে আছে, স্যার ক্লাসে এসে এমোনিয়া উৎপাদনে প্রভাবকের ভূমিকা বর্ননা করছিলেন। বর্ননা করতে করতে হঠাত করে সংজ্ঞা জিজ্ঞাসা শুরু করলেন। আমাদের টেবিলের আমরা কেউ বই নিয়ে আসছিলাম না বলে আমার পাশের বন্ধু সামনের টেবিল থেকে একটা বই চাইলেছিলো। স্যার বিষয়টা লক্ষ করতেই ওকে দার করিয়ে দিলেন। এবং একের পরে এক প্রশ্নের গুলি বর্ষন করতে তাকলেন। যা কিছুক্ষনের মধ্যেই তাকে কাতল করে ফেলে। সাস্তি সরুপ কান ধরে দার করিয়ে রাখেন। তখন ওর মতো আরো কয়েক জনকে এই সাস্তি দিয়ে রাখছেন স্যার। তারপরো আমার বন্ধু সামনে থেকে বই নিয়ে দারিয়ে দারিয়ে পড়তেছিলো। এতোক্ষনে প্রায় সবাই বই খুলে চোখ বোলাতে ব্যাস্ত হয়ে পড়েছে। আমিও আমার বন্ধুর সামনে খুলেরাখা বইটার দিকে তাকিয়ে মুখ নারিয়ে মনে মনে পড়তেছিলাম। আর একটা কথা বলতে ভুলেই গেছি যে, আমার ফেসটা দেখতে কেমন জানি একটা। চুপ চাপ থাকলেও মনে হয় হসতেছি। আমার এই হাসি হাসি মুখ নারানো দেখে স্যার ভেবেই বসলেন যে আমি গল্প করতেছি। আমাকেউ দার করিয়ে দিলেন এবং প্রশ্ন করে বসলেন “অত্যানুকুল তাপমাত্রা কি?”।আমার সংজ্ঞা মনে ছিলো “যে তাপমাত্রায় সর্বচ্চ পরিমান এমোনিয়াম উৎপন্ন হয়”।কিন্তু বিষয়টা ঐ সময় আমি একটু জটিল করে বলে ফেললাম "যে তাপমাত্রায় সর্বচ্চ পরিমান বিক্রিয়ক উৎপাদে পরিনত হয়”।স্যার মুচকি একটা হাসি দিয়ে সবার উদ্দেশ্যে বললেন আমিকি এই সংজ্ঞা বলেছি। স্যারের কথা শুনে পুরো ক্লাস হাসা হাসি করতে লাগলো। একজন তো বলেই বসলো “পন্ডিত সংজ্ঞা বানাইছে, স্যার”।আমি মনে মনে ভাবেছিলাম যে, এইবার হয়তোবা আমাকেও কান ধরে দারিয়ে থাকতে হবে। কিন্তু স্যার তা না করে আমাকে সামনে ডাকলেন। আমিও স্যারের হাসি মুখ দেখে নির্ভয়েই সামনে গেলাম। স্যার একটা কয়েন চেয়ে বসলেন। ২য় বাঞ্ছ থেকে কেউ একজন বলে উঠলো, “স্যার, ৫ টাকার কয়েন চলবে?”। স্যার আমাকে কয়েনটা আনতে বল্লেন। আমি স্যারের কথা মতো কয়েন টা নিয়ে আসলাম। স্যার আমাকে বুঝিয়ে দিলেন যে, দুইটা লাঠি আনা হয়েছে।একটা বাসের বেত আর একটা ছিলো কাঠের বেঞ্চের ভাঙ্গা অংশ। কয়েন দিয়ে টর্চ করে আমাকে যেকোনো একটা বাছাই করে নিতে হবে। স্যার দুই হাতে দুইটা লাঠি নিয়ে আমাকে টর্চ করতে বললেন। আমি ভয়ে স্যারের কথা না বুঝতে পেরে প্রশ্ন করলাম “জী স্যার?”। অমনি স্যার হাত থেকে একটা লাঠি ফেলে দিয়ে অন্যটা দিয়ে সজোরে আঘাত করলেন আমার বাম হাতের বাহুতে। সঙ্গে সঙ্গে আমি চোখ বন্ধ করে কঠর ভাবে তা অনুভব করলাম। নিশব্দ হয়ে গেনো পুরো ক্লাস। শুধু স্যার একাই কথা বলে যাচ্ছেন, কিন্তু আমি স্যারের কথা কিচ্ছু বুঝতে পারতেছিনা। আরো চারটা সটাং সটাং শব্দ শুনতে পাইলাম।আমার সম্পুর্ন শরীর টা মনে হচ্ছিলো পাথর হয়ে গেছে। আমি শুধু শব্দ শুনতে পাচ্ছি কিন্তু অনুভব করতে পারছিনা। স্যার তখনো যেনো কি সব বলে যাচ্ছিলেন, আমি স্যারের কথা বোঝার চেষ্টা করলাম। কিছুক্ষন পরে চোখ খুলতেই স্যারের ভীষণ ভাবে রাগান্নিত চেহারা দেখলাম। তখন স্যারের কথা গুলো বোধগম্য হতে লাগলো। স্যার বলতেছিলেন “ক্লাসে এসে পড়ালিখা না করে গল্প করো। বেয়াদব, ক্লাসে এসে আমাকে বিরক্ত করো। আমি কোন বেয়াদবের ক্লাস নিতে পারবোনা।আগামী তিনমাস আমার ক্লাসে তোমাকে যেনো না দেখি।তোমাকে ক্লাসে দেখলে আমি ক্লাস নিবো না”। তখনি স্যারের কাছে মাফ চেয়ে স্যারকে অনুরোধ করেছিলাম ক্লাস করার অনুমতি দেওয়ার জন্য। কিন্তু স্যার আমার কোন কথাই কান না দিয়ে সবার উদ্দেশ্যে বললেন “এই বিয়াদবকে ক্লাস থেকে বের করে দেবে নাকি আমি বেরিয়ে যাবো”। সেদিন আমার পক্ষে কথা বলার মতো বা আমার হয়ে স্যরের কাছে মাফ চাওয়ার মতো কেউ ছিলো না।
সবকিছু দেখে বাধ্য হয়ে ক্লাস থেকে বের হয়ে যাই। অনেক Negative চিন্তা ভাবনা মাথার মধ্যে ঘুরপারক খেতে থাকে। বাসায় গিয়ে ঠান্ডা মাথায় ভেবে সব Negative চিন্তা গুলাকে Positive এ রুপান্তর করার চেষ্টা করলাম। সেই সাথে নিজেকে বদলে ফেলার একটা সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলি। যদিও সিদ্ধান্তটা আগে থেকেই নেওয়া ছিলো, সেইটা আরো জোরালো হয়।
তারপর থেকে স্যারের প্রিয়ড এর আগেই আমি ক্লাস রুম থেকে বের হয়ে যেতাম। প্রায় দের মাস পর ম্যাথ ক্লাস শেষে ম্যাথ খাতায় উঠাচ্ছিলাম, এমন সময় স্যার ক্লাসে প্রবেশ করেন। আমার পাশের বন্ধু আমাকে বেরতে না দেওয়ায় সংকচ মনে ক্লাসেই বসে থাকলাম। স্যার যখন আমাকে দেখে কিছুই বলছেন না তখন আমার সংকচ কাটলো।সেই থেকে নিয়মিত ক্লাস করে যাচ্ছিলাম।এমন কি ঐ স্যারই একদিন রসায়নে ভালো করার কারনে প্রশংসা করেছিলেন। যাইহোক তখন থেকে একটা জিনিস বুঝতে পারলাম যে, স্যাররা আমাদের যতই বকা ঝকা করুক না কেনো এইটা আমাদের ভালোর জন্যই করে। সাময়িক ভাবে আমাদের মন খারাপ হইলেও পরে আমরা ঠিকি বুঝতে পারি। এই ঘটনার পরে থেকে পড়াশোনায় আরো বেশি মনযোগী হই। এমনকি HSC পরীক্ষায় আন্তঃ কলেজে দ্বিতীয় স্তান
পাই। একসময় ঐ ঘটনা গুলা মনে করলে অনেক খারাপ লাগতো কিন্তু এখন মনে হয়, ওমন ঘটনা না ঘটলে হয়তোবা আমার এই পরিবর্তন হইতো না। সেই সুপারিস করা জীবন থেকে এখন আমি পাবনা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় এ কম্পিউটার বিজ্ঞান ও প্রকৌশল বিভাগে অধ্যায়ন করতেছি।যা আমার মতো ছাত্রের জন্য অনেক বড় পাওয়া।যাইহোক বলতেই হয় ইন্টারমিডিয়েট লাইফে অনেক ভালো ভালো স্যারদের সাথে পরিচয় হয়ে ছিলো বলেই হয়তোবা এমন পরিবর্তন সম্ভব হয়েছে।সেখানে রসায়ন স্যারের কথা না ভোলার মতো।সকল শিক্ষকের মঙ্গল ও দির্ঘায়ু কমনা করে আজ এখানেই শেষ করছি।আল্লাহ হাফেজ...।

মন্তব্যসমূহ

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

Big Big mod

Dictionaries and Maps